প্রকাশিত: Fri, Mar 8, 2024 12:56 AM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 10:09 AM

রেস্টুরেন্ট ব্যবসাতে ঢালাও সিলগালা না করে সৎ তদারকি বেশি জরুরি

আশরাফুল ইসলাম রানা, ফেসবুক: গত ১২ বছরে দেশে হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজারের কম বা বেশি। ২০০৯-১০ সালে সংখ্যাটি ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার মাত্র।

আগে এ সেক্টরে কাজ করা রেস্টুরেন্টগুলো মোট আয়ের ১০.১৭ শতাংশ পারিশ্রমিকের পেছনে ব্যয় করলেও এখন শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২৬.৬৪ শতাংশ। নানা উপলক্ষে, আড্ডাতে জনবসতিপূর্ণ এলাকাতে বিনোদনের সহজ গন্তব্য এসব রেস্টুরেন্ট/রেস্তোরাঁ। অতি সম্প্রতি  রেস্টুরেন্টগুলোতে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তদারকি বেড়েছে। এখন জানা যাচ্ছে এফ ওয়ান ক্যাটাগরির অনুমোদনে কোন ভবনে বাণিজ্যিক রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা যাবে না। রেস্টুরেন্টে দরকার হবে ১৩ ধরনের সরকারি লাইন্সেসও। বরং ব্যবসাবান্ধব করতে আইনে সংশোধনী আনুন। কিছু ব্যপারে উত্তর খুঁজে পাই না এখনো:

১. রাজউকের এফ ওয়ান ক্যাটাগরিতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালানো না গেলে এতদিন কোন আইন ব্যতয় ঘটে তা সবার সামনেই পরিচালিত হয়েছে? সুবিধাভোগী সেসব সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়েও তদন্ত সংখ্যার তদারকি নাই কেন? কেউ কী শুধু রেস্টুরেন্ট বা ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে ভাড়া দিবে সেই কথা চিন্তা করে বাণিজ্যিক ভবন বানায়?

২. অধিকাংশ ব্র্যান্ড বা চেইন রেস্টুরেন্ট থেকে ভ্যাট অফিসে নিয়মিত ঘুষ যায় অফিস খরচের নামে, সেটা কারা পেত? 

৩. স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ যত্রতত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। সঠিকপথে লাইসেন্স না দেওয়ায় অনেকেই টেবিলের নিচ দিয়ে কাজ আদায় করছে।  খুলছে নিয়ম বর্হিভূত ইন্টেরিয়র ও প্লেসে রেস্টুরেন্ট। সে দায় তো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ভবন মালিকেরও।

৪. নিয়ম বর্হিভূতভাবে তদারকি সংস্থার অফিস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কীভাবে ভবন ভাড়া হচ্ছে? কীভাবে ভবন মালিকরা মোটা অংকের টাকা এ্যাডভান্স ও ভাড়াতে রেস্টুরেন্টের জন্য ভাড়া দিচ্ছে  সেই সব ভবন মালিকরা কেন পার পেয়ে যাচ্ছে?

৫. বর্তমানে  অভিজাত ভাবে তৈরি অনেক রেস্টুরেন্টই কালো টাকা সাদা করবার সহজ মাধ্যম। সেসব কর্পোরেট বড় ব্যবসায়ীদের রেস্টুরেন্ট চালুর পদ্ধতি সঠিক কিনা তা নিয়ে কী সূত্র খোঁজা হচ্ছে কোন?

৬. ঝড় আসলে প্রথম বড় নাম পরিচিতগুলোর উপরেই ফোকাস থাকে তদন্ত সংস্থার। রেস্টুরেন্টগুলোর ক্ষেত্রেও বড় গুলোতে আগে চলছে তদারকি। কিন্তু অতি উৎসাহী হতে গিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালে যেন ক্ষতিতে না পড়ে চালু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলো। সুযোগ দিন সংশোধনের, প্রয়োজনে বন্ধ রাখুন কিন্তু সিলগালা কেন?

৭. ক্র্যাক ডাউন থামবে শিগগরিই। আবার নিয়মিত পকেট ভারী হবে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি তদারকি সংস্থার কর্মকর্তাদের। কিন্তু ক্ষত পুষিয়ে উঠতে পকেট কাটা যাবে রেস্টুরেন্টে আসা জনগণেরই। খাদ্যরসিক জনগণের ফুডকেন্দ্রিক বিনোদনকে এক্সপেনসিভ করে তুলবার রাইট আপনাদের নাই। বরং কমপ্লায়েন্স ঠিক করান, খাদ্যের মান নিয়ে কথা বলুন, বাড়ির মালিক যেন অতিরিক্ত আকাশচুম্বী এ্যাডভান্স দাবি না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করুন। তবুও তা হঠাৎ না করে নিয়মিত করবার কেউ নাই?

৮. গত ১০/১১ বছরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আকারে বাড়ছেই। কম বিনিয়োগে  লাভ বেশি তাই বাড়ছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। বেড়েছে কর্মসংস্থান। এদেরকেও বাঁচাতে হবে। কিন্তু নিয়মকে সহজ করে ব্যবসাবান্ধব করবার জন্য সৎ নীতিনির্ধারণীদের নজর এদিকে বাড়ানো দরকার। কিন্তু নাই কেন তা?

৯. মধ্যপ্রাচ্যের পুরাটাই গ্যাস সিলিন্ডার/এলপিজিনির্ভর। তবে এদেশে এটা নিয়ে ভয় এত কেন?  অধিকাংশ বিস্ফোরক এক্সপার্ট বলছেন, সিলিন্ডার ভালো প্রতিষ্ঠানের হলে তা বিস্ফোরণের সুযোগ তেমন নেই। যদি আগুন লাগেই তা গ্যাস লিকেজ থেকে। পাশাপাশি বাসাবাড়ি বা রেস্তোরাঁর গ্যাস সিলিন্ডারগুলার মেয়াদ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতকারকদের চাপ দিন। রেস্টুরেন্ট ব্যবসাতে ইন্টেরিয়র, অভিজাত পরিবেশের আড়ালে যেন নিরাপত্তা বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য কমপ্লায়েন্স  নিশ্চিত করুন। ঘনবসতির এদেশে মানুষ বাঁচলে ব্যবসাও বাঁচবে। কঠিন শর্তসাপেক্ষে এবার ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিচ্ছেন না কেন?

১০. রেস্টুরেন্টে অভিযানের নামে এখানে কর্মরত কর্মচারিদের গ্রেফতার একটা বড়সড় তামাশাই। পারলে যেসব তদারকি সংস্থার অনুমোদনে গত ১৫ বছরে এ সেক্টর ৮ গুণ বেড়েছে, তাদের অনুমতি প্রদানে আন্ডার টেবিল প্রাধান্য পেয়ে থাকলে তাতে কারেকশন আনেন। সমণি¦ত টাস্কফোর্স দিয়ে অভিযান করুন। সব সংস্থার ঘুম আলাদাভাবে ভাঙ্গলে সেটা বিপদ বাড়াবে এ সেক্টরের ব্যবসায়ীদের।